আজ আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করব সেটি যতটা ঐতিহাসিক ততটাই রহস্যময়। সময়টা ১৮৫০ সাল। উত্তরপ্রদেশের ললিতপুর জেলার তালদেহট গ্রাম আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতনই ছিল । বাজ পুরের জমিদার মদন সিং তার যাতায়াতের পথে তালদেহট গ্রামে বিশ্রামের জন্য এবং সামরিক কাজে সুবিধার জন্য নির্মাণ করেন ললিতপুর কেল্লা ।
এই কেল্লাটি গ্রামের মানুষের অহংকার এর কারণ ছিল। মদন সিং ছিলেন অত্যন্ত নিপুন যোদ্ধা। সময় গড়িয়ে চললো,১৮৫৭ সালে সারাদেশ জুড়ে শুরু হলো সিপাহী বিদ্রোহ । বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এলেন ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ । জমিদার মদন সিং যোগ দিলেন রানী লক্ষ্মীবাঈ এর সঙ্গে। অত্যন্ত সুকৌশলে এই যোদ্ধা বিদ্রোহী সিপাহীদের নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। কিন্তু এই সময় কেল্লায় ঘটে গেল এক অনভিপ্রেত ঘটনা।
জমিদার মদন সিং অত্যন্ত বড় মাপের যোদ্ধা হলেও তার পিতা প্রহ্লাদ সিং ছিলেন অত্যন্ত অত্যাচারী এক মানুষ । সে বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন রীতি মেনে এলাকার সমস্ত মেয়ে বৌরা রাজবাড়ীতে এসেছিলেন পুজোয় সামিল হতে, তাদের সাথে এসেছিল তালদে হট গ্রামের সাতটি মেয়ে। এই সাতটি মেয়ে অপরূপ সুন্দরী ছিল। তাদের রূপে মুগ্ধ হয়ে গিয়ে প্রহ্লাদ সিং তাদের ধরে নিয়ে আসেন । মেয়ে গুলিকে প্রচুর অত্যাচার করে ধর্ষণ করে ন। গোটা তালদেহট গ্রামে নেমে আসে হাহাকার। লজ্জায় ঘৃণায় কেল্লার ছাদ থেকে সেই সাত কন্যা ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
জমিদার মদন সিং পিতার এই কুকীর্তির শুনে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে পড়েন। তিনি একজন চিত্রকর কে ডেকে ঐ সাতটি কন্যার স্মৃতির উদ্দেশ্যে কেল্লার মূল ফটকে তাদের চিত্র অংকন করান। আজও সেই চিত্র বর্তমান। সেই চিত্রই হল গ্রামবাসীদের ভয়ের একটি কারণ । চিত্রের সাত কন্যার চোখের ভয়ার্ত দৃষ্টি গ্রামবাসীদের বুকে কাঁপন জাগায়। রাতের বেলা তো দূর দিনের বেলাতেও কেউ কেল্লার ধারে কাছে যাওয়ার সাহস করে না ।
শোনা যায় আজও প্রত্যেক রাত্রে ঐ সাত কন্যার উপর হওয়া অত্যাচার এবং তাদের চিৎকার শোনা যায় । আজো তাদের অতৃপ্ত আত্মা কেল্লা জুড়ে কেঁদে বেড়ায় ।ঘটনার পর এতগুলি বছর পার হয়ে গেলেও আজও জমিদার মদন সিং এর সেই কেল্লা এক ভৌতিক আবহ তৈরি করে রেখেছে। আদৌ সেখানে ভূত আছে কিনা সেটা চর্চার বিষয় তবে দেড়শ বছর আগের ঘটা এই মর্মান্তিক ঘটনা এখনো গ্রামবাসীদের মনে টাটকা হয়ে আছে । এখনও ওই গ্রামে অক্ষয় তৃতীয়ার উৎসব পালিত হয় না। ইতিহাস আর রহস্যময়তার মিশ্রণে একলা দাঁড়িয়ে আছে ললিতপুর কেল্লা।
No comments:
Post a comment