সারা সপ্তাহ কর্মব্যস্ততায় কাটানোর পর সপ্তাহের শেষ দুটো দিন আমরা অনেক সময় বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে কাটিয়ে দিই। এটি আমাদের শারীরিক বিশ্রাম হয়তো হয়, কিন্তু মনের বিশ্রাম তো হয় না। আর সে কারণেই হয়তো দুদিন বাদে আবার নতুন করে কর্মব্যস্ততায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে বড্ড ক্লান্ত লাগে। এ সমস্ত কিছু থেকে মুক্তি পেতে হলে সপ্তাহের দুটো দিন কাছাকাছি কোথাও থেকে ঘুরে আসা যায় ।কিন্তু কাছাকাছি কি এমন জায়গা আছে যা আমাদের শরীর আর মনকে সতেজ করে তুলবে ?আছে বৈকি। খুঁজলেই পাওয়া যায়। কলকাতার খুব কাছে এমন একটি স্থান আছে যেখানে গেলে তার স্বাস্থ্যকর পরিবেশে যেমন শরীর ঠিক হয়ে যাবে তেমনি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মন ভালো হয়ে যাবে।
আজ আমরা আলোচনা করব সেই রকমই এক সুন্দর স্থান সম্পর্কে ।জায়গাটির নাম পিয়ালী আইল্যান্ড। পিয়ালী দ্বীপ হল সুন্দরবনের প্রবেশপথ। ছোট্ট শান্ত পিয়ালী নদী এখানে মাতলা নদীতে মিশেছে। আপনি ইচ্ছে করলেই পিয়ালী দ্বীপ থেকে নৌকা নিয়ে মাতলা নদীতে ভ্রমণ করতে পারেন। নদীর টাটকা হওয়ায় আপনার শরীরের সমস্ত ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে যাবে ।আর তার সঙ্গে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আপনার মনকে সজীব করার জন্য সব সময় প্রস্তুত। পিয়ালী নদী কে দেখতে সব থেকে সুন্দর লাগে ভোর বেলায়, অথবা জোৎস্না আলোকিত রাত্রে ।যখন ভোরের প্রথম আভা পিয়ালী নদীর উপর পড়ে সেই সময়কার অপরূপ সৌন্দর্য বোধহয় পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য কে হার মানায়। আবার জোৎস্না মাখা রাতে জ্যোৎস্নার মায়াবী আলোয় পিয়ালী নদী হয়ে ওঠে সত্যিই এক মায়াবিনী, এক রহস্যময়ী। এই সময় তার সৌন্দর্য যে না দেখেছে সে কল্পনা করতে পারবে না এই রূপের মাহাত্ম্য। নদীর শীতল বাতাস শরীর মন শান্ত করে দেয়। মনে হয় পৃথিবীর কোথাও কোনো তাড়া নেই, ক্লান্তি নেই ।নিশ্চিন্তে এই নদীর পাড়ে বসে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
হাতে একটুখানি সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন নিকটবর্তী ঝড়খালি থেকে। ঝড়খালি ছাড়াও কাছাকাছি কৈখালী ,ভরতগড় স্থানগুলি আপনাকে স্বাগত জানাবে।তবে পিয়ালী দ্বীপ সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত, যে কারণে সেটি হল বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা। এখানে বলা যেতে পারে এটি পাখিদের রাজ্য। শান্ত পিয়ালীর তীরে খেলা করতে দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে এসে ভিড় করে ।আর পাখি দেখতে ভিড় করে মানুষ। এই স্থানটি পক্ষী বিশেষজ্ঞদের অত্যন্ত প্রিয় স্থান। আরো একটি কারণে পিয়ালী দ্বীপ বাঙ্গালীদের অত্যন্ত প্রিয় একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। সেটি হলো রসনা তৃপ্তি। সবাই তো জানে মাছে ভাতে বাঙালি। আর পিয়ালী আইল্যান্ডে আসলে এই নদীর টাটকা মাছ ভাজার গন্ধে পাগল হবে না এমন বাঙালি বোধায় গোটা বাংলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। সারাদিন নদীর পাড়ে ঘুরে নদীর বুকে ভ্রমণ করে সন্ধ্যেবেলায় আপনাকে স্বাগত জানাবে টাটকা মাছ ভাজার গন্ধ। আশেপাশে অনেক মাছ ভাজার দোকান আপনি দেখতে পাবেন, যার যে কোন একটি থেকে আপনি আপনার পছন্দমত মাছ ভাজার স্বাদ নিতে পারেন।
আপনি বছরের যেকোনো সময় পেলে দেখে আসতে পারেন ।তবে যদি বিশেষ আনন্দ নিতে চান তাহলে বর্ষা অথবা শীতকালে পিয়ালী আইল্যান্ডে আসুন। কারণ বর্ষাকালে বর্ষার নতুন জলে মেতে ওঠা নদীর রুপ ই কিছু আলাদা থাকে । বর্ষার ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে পিয়ালী দ্বীপ কে অপূর্ব লাগে। আর যদি হোটেলের সামনে পুকুর থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই । বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ধারা পুকুরে শাপলা ফুল এবং শাপলা পাতার উপর পড়ে কি সুন্দর ছন্দ তৈরি করছে সেটা আপনি নিজের চোখে দেখতে পাবেন। আর যদি হালকা বৃষ্টির মধ্যে নদীর তীরে ভ্রমণ করতে যান ,তাহলে দেখতে পাবেন কেমন ভাবে আকাশ বাতাস এবং জল সব একসঙ্গে মিশে আলাপচারিতায় মগ্ন।আর যারা পাখি দেখতে পিয়ালী আইল্যান্ডে আসেন তাদের জন্য আদর্শ সময় শীতকাল। কারণ শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি এই অঞ্চলে এসে ভিড় করে।
এবারে আসি আসল কথায়। পিয়ালী আইল্যান্ডে যাবেন কিভাবে? কলকাতা থেকে পিয়ালির দূরত্ব মাত্র 75 কিলোমিটার। সড়ক পথে আসা যায়। অনেকে লং ড্রাইভ এর মজা নিতেও পিয়ালী দ্বীপে আসে। কামালগাছি বাইপাস ফ্লাইওভার ধরে সোজা চলে আসুন বারুইপুর।সেখান থেকে গোচারণ ধসা রোডে উঠে দক্ষিণ বারাসাত পেরোলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাবেন মহিষ মারি বাজার। বাজার ছাড়িয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে আসুন। পূর্ব দিকে পড়বে কুলতলী স্লাইস গেটের ব্রিজ। এই ব্রিজ পার হলেই আপনাকে স্বাগত জানাবে পিয়ালী আইল্যান্ড।তাহলে ঘরের কাছের পিয়ালী আইল্যান্ডে ঠিক কবে যাবেন? এত হিসেব নিকেশ করার দরকার নেই ।কাছাকাছি একটা ছুটি পেলে একবার ঘুরে আসুন পিয়ালী আইল্যান্ড থেকে।
No comments:
Post a Comment