আমরা কলকাতার মানুষজন বড্ড বেশি যান্ত্রিক হয়ে পড়ছি দিন দিন। রোজকার কর্ম ব্যস্ততার চাপে আমরা ভুলে যাচ্ছি স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে। এইসব কারণে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক রোগ এসে বাসা বাঁধছে আমাদের শরীরে। মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে সমস্ত কাজকর্ম ফেলে রেখে ছুটে যাই কোন নিশ্চিন্তে নিরালার খোঁজে, কিন্তু হাতে সময় যে বড় কম। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে কোথাও গিয়ে, নিজেদের মানসিক ভাবে প্রশান্ত করে আবার ফিরে আসা সম্ভব হয় না। তাই অনেক সময় মনের ইচ্ছে মনেই চাপা পড়ে যায়। আবার আমরা শুরু করি রোজকার ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার মাঝখানে যদি না থাকে তাহলে প্রতিযোগিতার মজা কোথায়? ক্লান্ত শ্রান্ত মন একসময় হার মেনে যায়। আর সে কারনে আজ আমি এমন একটি গন্তব্যের কথা বলতে চলেছি যেখানে যাওয়া খুবই সহজ, এবং যেখানে গেলে আমাদের চোখের এবং মনের সজীবতা আবার ফিরে আসবে।
আজ আমি বলতে চলেছি সুন্দর গ্রামের কথা। নামটা সবার কাছে খুব চেনা না হলেও অনেকের কাছেই হয়তো চেনা, কলকাতার খুব কাছে অবস্থিত এই সুন্দর গ্রাম কে তৈরি করা হয়েছে কর্মব্যস্ত মানুষদের মানসিক প্রশান্তি এবং সবুজের মাঝখানে নিজেদের আবিষ্কার করার জন্য। খড়, বাস এবং মাটি দিয়ে তৈরি সুন্দরবনের প্রধান তোরণটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এখানে থাকার জন্য রয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট কটেজ ।যেগুলি মাটি এবং খড়ের সমন্বয়ে নির্মিত। অর্থাৎ গ্রাম্য পরিবেশে মাটির বাড়িতে থাকার যে আনন্দ এবং প্রাকৃতিক আরাম তা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন সুন্দর গ্রামে এলেই, তবে অতিথিদের যাতে কোনো রকমের কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে কড়া নজর রয়েছে সুন্দর গ্রাম কর্তৃপক্ষের।
বাতাস ,ফাগুন, মহুল ইত্যাদি নামের কটেজ গুলি আপনাকে নিয়ে চলে যাবে গ্রামের সবুজ প্রান্তর এর মাঝখানে যেখানে মাটির খুব কাছাকাছি আপনি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন। কটেজে নিজের জিনিসপত্র রেখে কিছুটা পথ এগিয়ে এসে দেখা যাবে সেই পুরনো গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের আদলে তৈরি একটি বৈঠক খানা। এটিও নির্মাণ করা হয়েছে বাস, খড় এবং মাটির সমন্বয় ।বৈঠকখানা চারপাশে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুলোর অবস্থান দেখা যায়। বঙ্গ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং বঙ্গ প্রকৃতির মাঝে মানুষকে সজীবতা দান করতে এই সুন্দর গ্রাম সত্যিই অনন্য একটি স্থান।
এছাড়াও এক গ্রাম এর মাঝখানে আপনি পাবেন কৃত্রিম জলাশয় ,তুলসী মঞ্চ ,গাঁদা ফুলের বাগান। অর্থাৎ প্রত্যন্ত পাড়াগাঁয়ে যেরকম প্রাকৃতিক শোভা আপনি দেখতে পাবেন সমস্ত রকম স্বভাব সুলভ এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোয় আপনি সুন্দর গ্রামের পেয়ে যাবেন। যতদূর চোখ যায় দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ হাতছানি দিয়ে ডাকে।
সুন্দর গ্রাম পৌঁছানোর জন্য আপনাকে খুব বেশি কসরত করতে হবে না। সাইনসিটি থেকে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে চলে আসতে হবে ঘটকপুকুরে। সেখান থেকে চলে আসুন চন্ডিপুর। আর তারপরই পৌঁছে যান রাজচন্দ্রপুর সুন্দর গ্রামে। হাতে যদি দুই চার দিন সময় থাকে আর কর্ম ব্যস্ততার চাপে শরীর ও মন ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে শরীর এবং মন কে সবুজের রঙে রাঙিয়ে নিতে ,নতুন উদ্দীপনা ,নতুন কর্মশক্তির যোগান দিতে একবার ঘুরে আসতে পারেন সুন্দর গ্রামে।
No comments:
Post a comment