বাংলার প্রাচীন শহর মুর্শিদাবাদ।এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন।নবাবী আনার ছোঁয়া লেগে থাকা মুর্শিদাবাদের নবাবদের ঐশ্বর্য বৈভবের সঙ্গে খামখেয়ালীপনার বহু নিদর্শন এখনো চোখে পড়ে। গোটা শহরটা ঘুরে দেখলেই এমন অনেক স্থাপত্য মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে দেখা যায় যেগুলো নবাবদের খামখেয়ালীপনার নিদর্শন।
আজ আমরা এমনই একটি স্থাপত্য সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি সেটি হল মুর্শিদাবাদের ফুটি মসজিদ।মুর্শিদকুলি খাঁর দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খান নির্মাণ করেছিলেন এই ফুটি মসজিদ বা ফৌত মসজিদ। এর দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা হলো 135 ফুট ও 40 ফুট। মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার আছে। এই মসজিদটি সঙ্গে মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ এর অনেক মিল পাওয়া যায়।
মুর্শিদকুলি খাঁর দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খান চেয়েছিলেন তার রাজ্যের অক্ষয় কীর্তি হিসেবে তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করবেন।এজন্য তিনি আদেশ দিয়েছিলেন এক রাত্রের মধ্যেই এই বিশাল মসজিদটি নির্মাণ করতে হবে। সুজাউদ্দৌলার মৃত্যুর পর 1739 সালে তিনি নবাব হন। কিন্তু তিনি নবাবী দায়িত্ব পালন না করে কাজকর্ম সমস্ত ভার মন্ত্রী এবং আমলাদের উপর ছেড়ে দিয়ে ভোগ বিলাস ব্যসনে নিমগ্ন হয়ে পড়েন। এই নিয়ে মন্ত্রী মন্ডল এর সঙ্গে তার বিরোধ দিনে দিনে বাড়তে থাকে।দেশে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে আলীবর্দী খানের সৈন্যদের হাতে তিনি নিহত হন। নিজের জীবন দশায় তিনি নিজের সমাধি সৌধের জন্য মসজিদ নির্মাণ করা শুরু করেছিলেন কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয়নি।বিভিন্ন যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়ার ফলে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই নবাবের মৃত্যু হয় অর্থাৎ নবাব ফৌত হয়ে যান।
এই কারণে এই মসজিদটিকে ফৌত মসজিদ বলা হয়। মসজিদের দেওয়ালের গায়ে ইন্দ সৌরসেনি স্থাপত্য চিহ্ন অঙ্কিত আছে। তবে বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দিরটির অবস্থা অত্যন্ত জরাজীর্ণ।মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে গেলে একবার এই ফুটি মসজিদ দর্শন করে আসতেই পারেন। ইতিহাসের এমন এক অমর স্থাপত্য বর্তমানে ঝোপঝাড় জঙ্গলে ঢেকে আছে, তবে এখানে এলে সে নবাবী আমলের স্পর্শ আপনি পাবেন।
No comments:
Post a comment