ব্যস্ত সময় থেকে একটুখানি অবসর বের করে নিজের জন্য কোথাও বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। ক্লান্ত শরীর মনকে আবার নতুন করে সজীব এবং সবুজ করে তুলতে ভ্রমণ ব্যাপারটা সত্যি খুব প্রয়োজনীয়। আমরা তো কাজ করে ক্লান্ত হই না আমরা ক্লান্ত হই আমাদের মনের পরিশ্রম হলে। আর সে কারণেই মনকে বিশ্রাম দিতে এবং মনকে নতুন কিছু দেখাতে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসাটা খুব জরুরী। এত কিছু জানা সত্ত্বেও অনেক সময় আমাদের কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না। কারণ ওই একটাই, সময়ের বড় অভাব। সেই কারণেই আমরা খুঁজে খুঁজে বের করি এমন কিছু স্থান কে যেগুলো খুব বেশি সময় সাপেক্ষ নয় আবার খুব বেশি দূরেও নয়।
সেরকমই আজ আমরা চলেছি ঘাটশিলার সৌন্দর্য পরিভ্রমণে। ঘাটশিলা ঝাড়খন্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার শহর ।পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুবর্ণরেখা নদী ।অঞ্চল টি মূলত বনভূমি এলাকা। এটি আগে ধলভূম রাজ্যের সদর দপ্তর ছিল। এখানে একটি বহু প্রাচীন তামার খনি আছে। ঝাড়খন্ড রাজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র ঘাটশিলা। সুবর্ণরেখা নদী পরিবৃত্ত এ অঞ্চলটি পাহাড় ও বনভূমি দিয়ে ঘেরা।
এত গেল ঘাটশিলার ভৌগোলিক বর্ণনা। এবার আসা যাক ঘাটশিলায় কি কি দেখার জিনিস আছে। ঘাটশিলা ভ্রমণ করতে এলে প্রথমেই চলে যান ছোটা পুল। এটি একটি ছোট্ট ব্রিজ এখান থেকে সুবর্ণরেখার জল আসে। আশেপাশের নিস্তরঙ্গ গ্রাম ও প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। খেজুর গাছে বাবুই পাখির বাসা অথবা সেই ছেলেবেলা গ্রাম্য প্রান্তরে ছুটে বেড়ানো ছেলের দল আপনাকে আপনার অজান্তেই খুশি এনে দেবে। এরপর চলে যান বা হি বুরা রামকৃষ্ণ মঠ। এখানে এসে সত্যিই মন জুড়িয়ে যায়। বাইরে বিশাল ভাবে টাঙ্গানো স্বামীজীর ছবি সহ ভিতরে রামকৃষ্ণ দেব সারদা মায়ের শান্ত সৌম্য মূর্তি। এছাড়া এখানকার আশেপাশের ফুল বাগান ফুলের মিষ্টি সৌরভ সত্যিই মনকে এক সুন্দর প্রশান্তি এনে দেয়। এখান থেকে 4 5 মিনিট দূরত্বে কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। আমরা জানি তিনি বরাবরই প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন। আর সত্যিই এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই বেশি যে এখানে আসলে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন কেন বিভূতিভূষণ এই জায়গাটির প্রেমে পড়েছিলেন। বিভূতিভূষণের বাড়ি দেখা শেষ হলে চলে যেতে পারেন রাত মোহনা ব্রিজ। এটি সুবর্ণরেখা নদীর উপর স্থাপিত একটি ব্রিজ। এ ব্রিজ টি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য বেশ বিখ্যাত। এখান থেকে প্রাণ ভরে দেখা যায় সোনার নদী সুবর্ণরেখা কে। সত্যিই নদীর সোনালী জলধারার জন্য এই নদী সুবর্ণরেখা নাম সার্থক। ব্রিজের উপর থেকে দেখতে অসুবিধা হলে চলে আসুন নদীর পাড়ে। দেখতে পাবেন দুরন্ত স্রোতস্বিনী সুবর্ণরেখা বয়ে চলেছে তার নিজের খেয়ালে। নদীর সঙ্গে গল্পগুজব সেরে বেরিয়ে পড়ুন সিদ্ধেশ্বরী মন্দির এর উদ্দেশ্যে। নদীর পর এবার পাহাড়। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরটির পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হয় সময় লাগে প্রায় 30 মিনিট। পাহাড়ের উপরে মন্দিরের অপরূপ সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতায় সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার বেড়িয়ে পরা যাক দ্বিতীয় একটি মন্দিরের উদ্দেশ্যে ।রামকিনি দেবীর মন্দির। শোনা যায় এই মন্দির কে নির্মাণ করেছিলেন রাজা জগন্নাথ ধবল দেও।
স্থানীয় লোকদের থেকে জানা গেল এই মন্দিরে আগে নরবলি প্রথা প্রচলন ছিল। যদিও এখন সেসব ইতিহাস। তবে এই মন্দির এর দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। আপনি চাইলে এখানে পুজো দিতে পারেন। মন্দির দেখা শেষ করে এবার আমরা যাব কালদিঘি ডাম্প। ডাম্প এ ঢুকতেই আপনাকে স্বাগত জানাবে ডাম্প থেকে জল ছাড়ার প্রচন্ড শব্দ ।এর ওপর থেকে মানুষজন বিভিন্নভাবে মাছ ধরছেন। এতক্ষণ আমরা যে যে জায়গাগুলো ভ্রমণ করলাম তার মধ্যে এই ডাম্পটি সবথেকে উঁচু। এবার যাওয়া যাক জঙ্গল ভ্রমণে। তবে জঙ্গলে ঢোকার আগে স্থানীয় গ্রাম থেকে লোকাল কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিতে পারেন। জঙ্গলের ভিতরকার বন্য সৌন্দর্য আপনাকে বর্তমান সময় থেকে নিয়ে যাবে অনেকটা পিছনে। এখানে সরু স্রোতস্বিনী ঝর্ণা আছে। যদিও শীতকালে তাতে জল থাকে না ।তবে আশেপাশের সবুজের সমারোহ এবং বিশুদ্ধ হওয়া আপনাকে সতেজতা দান করবে। জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট একটি মন্দির পাওয়া গেল। কিন্তু সেটি ঠিকই কি দেবতার মন্দির সেটা আন্দাজ করা গেল না। এরপর অবশ্যই আপনার ভ্রমণ তালিকায় সংযুক্ত করতে পারেন বিভূতিভূষণ লাইব্রেরীকে।
তাহলে ঘাটশিলা ভ্রমণ করতে গেলে কোন কোন জায়গা গুলি আপনাকে আকর্ষণ করবে তার একটা তালিকা দিয়ে দি।
১. বুদরী দাম
২. ধারা গিরি ফল
৩. সুবর্ণরেখা নদীর উপর রাত মোহনা ব্রিজ
৪. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি
৫. বিভূতিভূষণ লাইব্রেরী
৬. রামকৃষ্ণ মঠ
৭. ছোটা পুল
৮. সিদ্ধেশ্বরী মন্দির
৯. রামকিনি মন্দির
১০. কালি দি আর রেখা দাম
ব্যাস তাহলে এবার সময় সুযোগ মত একটা ছুটি দেখে চট করে ঘুরে আসুন ঘাটশিলা থেকে ।আর পাহাড় নদী এবং সবুজের সমারোহে নিজেকে আরও একবার নতুন করে আবিষ্কার করুন।
No comments:
Post a comment